রায় চৌধুরী বাড়ির ইতিহাস ও দুর্গা পূজা, শিবপুর, হাওড়া
শ্যামল কুমার ঘোষ
রায়চৌধুরী বাড়ি :
৪৬ এ / ১১ শিবপুর রোড, শিবপুর, হাওড়া
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : হাওড়া জেলার শিবপুরের রায়চৌধুরী বংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা রামব্রহ্ম ( মুখোপাধ্যায় ) -এর আদি বাসভূমি ছিল উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ব্যারাকপুর মহকুমার চানক মণিরামপুর। এঁদের সাবেকি বাড়িটি পলতার জলাধার তৈরির সময় অবলুপ্ত হয়। ভিন্নমতে, এই বংশের একাংশ গোবিন্দপুর ( ফোর্ট উইলিয়ামের আদি কেন্দ্রস্থল ) গ্রামে বাস করতেন। আনুমানিক ১৬৮৩ খ্রীঃ ভরদ্বাজ গোত্রীয় ব্রাহ্মণ জমিদার রাজা রামব্রহ্ম রায়চৌধুরী পৈতৃক জমিদারির তেরোটি গ্রাম ( শিবপুর, রামকৃষ্ণপুর, ব্যাতাইতলা, ভাসি, সলপ, নিবড়া, মাঝের হাটি, বাঁকড়া, গোদা, বেতড়, চামরাইল, নিতাঙ্কুর ও দেবীপাড়া প্রভৃতি ) নিজের ভাগে পেয়ে শিবপুরে বসতি শুরু করেন। 'হাওড়া জেলার ইতিহাস' লেখক অচল ভট্টার্চার্যের মতে মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের ( ১৬৫৮- ১৭০৭ খ্রীঃ ) ফরমানে রায়চৌধুরীরা এই অঞ্চলের জমিদারির মালিক হন এবং 'রাজা' উপাধি পান। শিবনারায়ণ শাস্ত্রীর মতে, নবাব আলীবর্দীর ( ১৭৪০-৫৬ খ্রীঃ ) আনুকুল্যে হাওড়ার এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের স্বত্ব পান রামব্রহ্মের পুত্র সুকদেব। সাত্ত্বিক রাজা রামব্রহ্ম রায়চৌধুরী গৃহী-সংসারী হয়েও ব্রহ্মচারীর মত জীবন যাপন করতেন। তিনি ১৭০৭ খ্রীঃ মারা যান। অনেকে মনে করেন, শিবপুরের বেতাইচণ্ডী ( বেত্রচণ্ডিকা ) মন্দিরটি রায়চৌধুরী বংশের পূর্বপুরুষদেরই প্রতিষ্ঠিত। তবে এটি সঠিক না হলেও মন্দিরটির সংস্কার ও দেবীর নিত্যপূজার ব্যবস্থা যে রায়চৌধুরীরা করেছিলেন তা অনস্বীকার্য।
রাজা রামব্রহ্মের পুত্র সুকদেব জমিদারির মালিক হন আনুমানিক ১৭০৭ খ্রীঃ। মোগল সম্রাট ফারুকশিয়ার ১৭১৭ খ্রীঃ ইংরাজ বণিকদের বিনা শুল্কে বাংলায় বাণিজ্য করার অনুমতি দেন। কিন্তু বাংলার স্বাধীনচেতা সুবাদার নবাব মুর্শিদকুলি খান প্রথমে এই ফরমান অগ্রাহ্য করেন, পরে অবশ্য মেনে নেন। ইংরাজ কোম্পানি ভাগীরথীর উভয় তীরের প্রায় আটত্রিশটি গ্রামে বাণিজ্য করার অনুমতি পায়। কিন্তু পশ্চিম তীরের গ্রামগুলি ( সালিকা, হাওড়া, কাসুন্দিয়া, বেতড়, শিবপুর প্রভৃতি ) বহুদিন নবাবের পরোক্ষ সহায়তায় রায়চৌধুরীদের বিরোধিতার জন্য ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সঙ্গত কারণে ইংরাজ কোম্পানি সে জন্য রায়চৌধুরীদের খুব একটা সুনজরে দেখতেন না।
রায়চৌধুরীদের দুর্গাপূজা প্রাচীনত্ব ও নিখুঁত শাস্ত্রীয় নিয়মানুবর্তিতার জন্য বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। রাজা রামব্রহ্ম আনুমানিক ১৬৮৬ খ্রীঃ নহবৎখানা সহ এক বিশাল দুর্গাদালান তৈরী করেছিলেন। শোনা যায়, ইংরেজ-বিদ্বেষী অভিব্যক্তিতেই এঁদের পূজায় নাকি সাদা চামড়ার প্রতীক একটি সাদা ছাগ বলির প্রবর্তন করেন রামহ্মের পুত্র সুকদেব। এখানে উল্লেখ্য, দুর্গাদালানটি প্রথমে ছিল বাঁশের তৈরি আটচালা। এখনও এই দুর্গাদালানটি 'সাঁজের আটচালা' নামেই পরিচিত। দুর্গাদালানে এখনও প্রতি বছর প্রাচীন রীতি অনুযায়ী দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
সঙ্গের প্রতিমার ছবি ২০১৮ সালের ষষ্ঠীর দিন তোলা।
দুর্গাদালানে প্রতিমা - ১ |
দুর্গাদালানে প্রতিমা - ২ |
দুর্গাদালানে প্রতিমা - ৩ |
দুর্গাদালানে প্রতিমা - ৪ |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন