সোমবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৮

Santipur Baro Goswami Bari History and Durga Puja, Santipur, Nadia

    

শান্তিপুর   বড়  গোস্বামী  বাড়ির  ইতিহাস  ও  দুর্গা  পূজা , শান্তিপুর, নদিয়া

                                                             শ্যামল  কুমার  ঘোষ


              সংক্ষিপ্ত  ইতিহাস :  বৈষ্ণব  চূড়ামণি  শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের  সাধনক্ষেত্র  শ্রীধাম  শান্তিপুর।  কথিত  আছে,  প্রায়  সাড়ে  পাঁচশো  বছর  আগে  পিতৃ-মাতৃ  বিয়োগের  পর  শ্রীঅদ্বৈতাচার্য  ভারত  ভ্রমণে  বেড়িয়ে  বর্তমান  নেপালের  গণ্ডকী  নদী  থেকে  এক  পবিত্র  নারায়ণ  শিলা  পান।  সেই  নারায়ণ  শিলা  তিনি  পরম  শ্রদ্ধায়  তাঁর  শান্তিপুরের  বাড়িতে  এনে  নিত্যসেবা  করতে  থাকেন।  অপ্রকট  হওয়ার  আগে  তিনি  সেই  নারায়ণ  শিলার  পূজার্চনার  ভার  তাঁর  প্রিয়  পুত্র  বলরামের  হাতে  অর্পণ  করেন।  পরে  বলরাম ওই  নারায়ণ  শিলার  পূজার্চনার  দায়িত্ব  দেন  জ্যেষ্ঠ  পুত্র  মথুরেশের  হাতে।  সেই  থেকেই  বংশ  পরম্পরায়  বড়  গোস্বামী  বাড়িতে  পূজিত  হচ্ছেন  অদ্বৈতপ্রভু  প্রতিষ্ঠিত  নারায়ণ  শিলা।  শ্রীঅদ্বৈতপ্রভুর  পৌত্র  মথুরেশ  গোস্বামীর  জ্যেষ্ঠ  পুত্র  রাঘবেন্দ্রের  বাড়ি  হিসাবে  পরবর্তী  কালে  এই  বাড়ি  'বড়  গোস্বামী  বাড়ি'  নামে  খ্যাত  হয়।

              বড়  গোস্বামী  বাড়িতে  শ্রীশ্রী রাধারমণ  বিগ্রহ  এক  দালান  মন্দিরে  প্রতিষ্ঠিত।  উৎকলীয়  ভাস্কর্যরীতির  এই  বিগ্রহটি  প্রথমে  উড়িষ্যারাজ  ইন্দ্রদ্যুম্ন  কর্তৃক  দোলগোবিন্দ  (একক  কৃষ্ণমূর্তি )  নামে  পুরীধামে  প্রতিষ্ঠিত  হয়।  যশোহর  রাজ  প্রতাপাদিত্য  তাঁর  খুল্লতাত  বসন্ত  রায়ের  আদেশে  পুরী  থেকে  সেটিকে  যশোহরে  নিয়ে  এসে  প্রতিষ্ঠা   করেন।  শান্তিপুরের  মথুরেশ  ছিলেন  এই  বিগ্রহের  পুরোহিতের  গুরু।  মানসিংহের  যশোহর  আক্রমণের  সময়  মথুরেশ  সেখানে  উপস্থিত  ছিলেন।  তিনি  বিগ্রহটিকে  শান্তিপুরে  নিয়ে  এসে  নিজগৃহে  নবরূপে  'রাধারমণ'  নামে  প্রতিষ্ঠা  করেন।  মথুরেশ  তিন  বিগ্রহ  তিন  পুত্রকে  দেন ;  শ্রীশ্রী  রাধারমণ  রাঘবেন্দ্রকে,  শ্রীশ্রী  রাধাবিনোদ  ঘনশ্যামকে  এবং  শ্রীশ্রী  রাধাবল্লভ  রামেশ্বরকে।  মুকুন্দদেবের  ( রাঘবেন্দ্র  পুত্র )  পুত্র  ব্রজকিশোরের  সময়  এই  বিগ্রহ  অপহৃত  হয়।  দিগনগরের  ঘোলার  বিলে  অপহৃত  বিগ্রহ  পাওয়া  যায়।  কৃষ্ণনগরের  রাজবাড়িতে  নিদর্শন  দেখিয়ে  বিগ্রহ  ফিরিয়ে  এনে  পুনরায়  প্রতিষ্ঠা  করা  হয়।  'কাত্যায়নী'  পূজার  অনুকরণে  সেই  সময়  বড়  গোস্বামী  বাড়িতে  দুর্গাপূজার  প্রবর্তন  হয়।  এখনও  প্রতি  বছর  বাড়ির  দুর্গাদালানে  দুর্গা  পুজো  অনুষ্ঠিত  হয়।

            সঙ্গের  ছবিগুলো  ২০১৮  সালের  অষ্টমীর  দিন  তোলা।      

              
দুর্গাদালান 

প্রতিমা - ১

প্রতিমা - ২

প্রতিমা - ৩

              শান্তিপুরের  বড়  গোস্বামী  বাড়িতে  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  থেকে  শান্তিপুর  লোকাল  ধরুন।  রেলপথে  শান্তিপুরের  দূরত্ব  ৯৩  কি মি।  ট্রেনে  সময়  লাগে  ঘন্টা  আড়াই। স্টেশন  থেকে  রিকশায়  বা  টোটোতে  পৌঁছে  যান  বড়  গোস্বামী  বাড়ি।  ৩৪ নং  জাতীয়  সড়ক  শান্তিপুরের  ওপর  দিয়ে  গেছে।  তাই  বাসে  বা  গাড়িতেও  যেতে  পারেন। 

সহায়ক  গ্রন্থাবলি   : 
                  ১. নদিয়া  জেলার  পুরাকীর্তি :  মোহিত  রায় ( তথ্য-সংকলন  ও  গ্রন্থনা )                 
                  ২. শান্তিপুর - পরিচয় ( ২ য়  ভাগ ) :  কালীকৃষ্ণ  ভট্টাচার্য 
                                                   
                                                                     *******


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন