শেওড়াফুলি রাজবাড়ির ইতিহাস ও দুর্গা পূজা, হুগলি
শ্যামল কুমার ঘোষ
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : হাওড়া-ব্যাণ্ডেল বা হাওড়া-তারকেশ্বর রেলপথের নবম স্টেশন শেওড়াফুলি। হাওড়া থেকে দূরত্ব ২২ কিমি। শেওড়াফুলি রেলস্টেশনের পশ্চিম দিকের কিছুটা দূরে, সুরেন্দ্রনাথ বিদ্যানিকেতন স্কুলের পাশে শেওড়াফুলি রাজবাড়ি অবস্থিত। শেওড়াফুলি রাজবংশ বাঁশবেড়িয়া রাজবংশের আর এক শাখা। বাংলার প্রাচীন রাজবংশগুলির মধ্যে এই রাজবংশ অন্যতম। এঁরা উত্তররাঢ়ীয় কায়স্থ ( দত্ত )। আকবর বাদশাহের আমল থেকে রায়, মজুমদার ইত্যাদি উপাধি ভোগ করে আসছেন। আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি, এই বংশের দ্বারকানাথ বর্ধমান জেলার পাটুলি গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। দ্বারকানাথের পৌত্র সহস্রাক্ষ এবং সহস্রাক্ষের পৌত্র রাঘব ( রাঘবেন্দ্র ) দত্ত। রাঘবের দুই পুত্র, রামেশ্বর ও বাসুদেব। তাঁদের সময় পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ হয়ে যায়। অগ্রজ রামেশ্বর পাটুলি ত্যাগ করে বাঁশবেড়িয়ায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। বাসুদেব পাটুলিতে থেকে যান এবং জমিদারি তদারকি করার সুবিধার্থে শেওড়াফুলিতে অস্থায়ীভাবে বাস করতে থাকেন। বাসুদেবের পুত্র মনোহর শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে পাকাপাকি ভাবে বাস শুরু করেন। তাই মনোহরকে শেওড়াফুলি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়।
মনোহর রায় বহু দেবদেবীর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলা ১১৪১ সালের ১৫ ই জ্যৈষ্ঠ ( ১৭৩৪ খ্রীষ্টাব্দে ) তিনি রাজবাড়িতে অষ্টধাতুর শ্রীশ্রী সর্বমঙ্গলা দেবীর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর পূজা নির্বাহের জন্য বহু সম্পত্তি দেবোত্তর করে দেন। সর্বমঙ্গলার বর্তমান মন্দিরটি অনুচ্চ ভিত্তিবেদির উপর প্রতিষ্ঠিত, দক্ষিণমুখী, একটি দালান। মন্দিরে শ্রীশ্রী সর্বমঙ্গলার নিত্য পূজা ছাড়াও দুর্গা পূজার সময় বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। রাজা মনোহরের পুত্র রাজা রাজচন্দ্র রায় শ্রীপুরে ( শ্রীরামপুরে ) 'রামসীতা মন্দির' নির্মাণ করে তিন শ' বিঘা জমি জমি দেবোত্তর করে দেন। 'শ্রীপুর' বা 'শ্রীরাম' থেকেই 'শ্রীরামপুর' নামটি উদ্ভূত হয়েছে। রাজচন্দ্রের পুত্র রাজা আনন্দচন্দ্র রায়। আনন্দচন্দ্রের পুত্র রাজা হরিশ্চন্দ্র রায় শেওড়াফুলির গঙ্গার ধারে শ্রী শ্রী নিস্তারিণী কালী মাতার মন্দির ও বিগ্রহ প্রতিষ্টা করেন। রাজা হরিশচন্দ্রের তিনটি বিবাহ। প্রথমা রানি সর্বমঙ্গলা দেবীর অপঘাতে মৃত্যু হয়। অপর দুই রানি হরসুন্দরী দেবী ও রাধারাণী ( অন্যমতে, রাজধন দেবী ) নিঃসন্তান হাওয়ায় যোগেন্দ্রচন্দ্র ও পূর্ণচন্দ্রকে দত্তক নেন। এঁরা যথাক্রমে 'বড়তরফ' ও 'ছোটতরফ' নামে পরিচিত হন। বড়তরফের রাজা যোগেন্দ্রচন্দ্র একজন সুগায়ক ছিলেন। তাঁর দুই পুত্র - ব্রজেন্দ্রচন্দ্র ( স্বল্পায়ু ) ও গিরীন্দ্রচন্দ্র। গিরীন্দ্রচন্দ্রের একমাত্র কন্যা নিরুপমা দেবী। রাজা গিরীন্দ্রচন্দ্রের উত্তরাধিকারী দৌহিত্র নির্মলচন্দ্র ঘোষ। বর্তমানে নির্মলচন্দ্রের বংশধরগণ বড়তরফ হিসাবে এই বাড়িতে বসবাস করেন। দুর্গা পূজার সময় শ্রীশ্রী সর্বমঙ্গলা মাতার বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সঙ্গের ছবিগুলি ২০১৬ সালে দুর্গাপুজোর সময় তোলা।
সহায়ক গ্রন্থাবলী :
------------------------------------
শেওড়াফুলি রাজবাড়ি |
রাজবাড়ির পঙ্খের কাজ |
শ্রীশ্রী সর্বমঙ্গলা মন্দির |
শ্রীশ্রী সর্বমঙ্গলা মাতা - ১ |
শ্রীশ্রী সর্বমঙ্গলা মাতা - ২ |
সহায়ক গ্রন্থাবলী :
১) হুগলি জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ ( ৩ য় খণ্ড ) : সুধীর কুমার মিত্র
২) পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি : বিনয় ঘোষ
২) পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি : বিনয় ঘোষ
৩) হুগলি জেলার পুরাকীর্তি : নরেন্দ্র নাথ ভট্টাচার্য
৪) বাংলার খেতাবী রাজরাজড়া : বিমল চন্দ্র দত্ত
------------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
please mention successors name of this zamindar bari.
উত্তরমুছুন