কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি দুর্গাপূজা, কৃষ্ণনগর, নদিয়া
শ্যামল কুমার ঘোষ
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :নদিয়া জেলার সদর শহর কৃষ্ণনগর। নদিয়ারাজের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদারের পৌত্র রাজা রাঘব রায় তাঁর জমিদারির প্রায় মাঝখানে, জলঙ্গী-নদীতীরের রেউই গ্রামে, চারি দিকে পরিখা খনন করে রাজধানী স্থাপন করেন।রাজা রাঘবের পুত্র রাজা রুদ্র রায় রেউই- এর নাম পরিবর্তণ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নামে নাম রাখেন কৃষ্ণনগর। কথিত আছে, সেই সময় রেউই-এ অনেক গোপের বসতি ছিল এবং তাঁরা মহাসমারোহে শ্রীকৃষ্ণের পুজো করতেন। সে কারণে তিনি এই নামকরণ করেন। রাজা রুদ্র দিল্লীর বাদশাহ জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে পূর্তকাজে নিপুন এক স্থপতিকে এনে কৃষ্ণনগরে তাঁর সহায়তায় কাছারি, চক, মুসলিম স্থাপাত্যানুগ চারমিনার সদৃশ তোরণ প্রভৃতি নির্মাণ করেন। বিষ্ণুমহল ও পঙ্খ-অলংকৃত পূজামণ্ডপ নির্মাণ করেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র। অবশ্য পরবর্তী বিভিন্ন নদিয়ারাজের সময়ে এ সবের সংস্কার ও নবীকরণ হয়েছে।
রাজবাড়ির বিরাট পূজামণ্ডপ সত্যই এক দর্শনীয় পুরাসম্পদ। পূজামণ্ডপের 'পঙ্খে'র বিচিত্র কারুকার্য অতুলনীয়। পূজামণ্ডপের থাম, খিলান ইত্যাদিতেও রাজকীয় ছাপ লক্ষ্য করা যায়। মূল পূজার স্থানটি বেশ বড়। তাকে ঘিরে সামনে-পিছনে-পাশে কয়েকটি অলিন্দ আছে। বিভিন্ন পূজাপার্বণ উপলক্ষে যাত্রা, গান, কথকতা প্রভৃতির আসর মূল পূজা-স্থানটির সামনের অঙ্গনে বসত। এই ধরনের বিরাট মণ্ডপ পশ্চিমবঙ্গে আর দেখা যায় না।
পূজামণ্ডপে প্রতি বছর মহা সমারোহে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। আগের মত সেরকম জাঁকজমক না থাকলেও ঐতিহ্যের টানে এখনও বহু মানুষ রাজবাড়ির পূজা দেখতে ভিড় করেন। রাজবাড়ির দুর্গাপ্রতিমার নাম 'রাজরাজেশ্বরী'। রথের দিন প্রতিমা তৈরী শুরু হয়। মহালয়ার দিন হোমকুন্ড জ্বালিয়ে পূজার সূচনা হয়। একটানা নবমীর দিন পর্যন্ত জ্বলে সেই আগুন। সপ্তমীতে সাত, অষ্টমীতে আট এবং নবমীতে ন' রকম ভাজা সহযোগে দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়। দশমীতে জলঙ্গি নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। সঙ্গের ছবিগুলো ২০১৫ সালে তোলা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন