বাগ বাড়ির দুর্গা পূজা, শিবপুর, হাওড়া
শ্যামল কুমার ঘোষ
বাগ বাড়ির ঠিকানা :
১১/২৪ বলাই মিস্ত্রি লেন, শিবপুর, হাওড়া - ৩
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :
এই বাড়ির পূর্বপুরুষ শ্রী পরেশ চন্দ্র বাগ ছিলেন হাওড়া জেলার বলুহাটি অঞ্চলের বাগ পরিবারের সপ্তম পুরুষ। অল্প বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। ১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দে পারিবারিক কারণে তিনি তাঁর পৈত্রিক বিষয়-সম্পত্তি পরিত্যাগ করে হাওড়া জেলার পাতিহাল অঞ্চলে চলে আসেন। পরবর্তী কালে, কর্মজীবনে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের উচ্চপদস্থ অফিসার হিসাবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন। হাওড়ার শিবপুরে নতুন বাড়ি নির্মাণ করেন। এই ভদ্রাসনে তাঁদের বলুহাটি গৃহের দুর্গা পূজা ছোট আকারে আলাদা করে শুরু করেন। পরে অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পারিবারিক পূজারও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। বর্তমানে তাঁর অধস্তন তৃতীয় পুরুষ শ্রী সৌজিত বাগ এই বাড়িতে পূজা পরিচালনায় ব্রতী আছেন।
এই পরিবারে দুর্গা কন্যা রূপে পূজিতা হন। মাকে বেনারসী শাড়ি ও সোনার গহনা পরানো হয়। মাহিষ্য পরিবার বলে অন্নভোগের রীতি নেই। ভোগে ৭ রকমের মিষ্টি ও ৫ রকমের নোনতা খাবার মাকে নিবেদন করা হয়। এর মধ্যে লুচি, মিষ্টি, মালপোয়া, গজা, বোঁদে, নিমকি, মিহিদানা, কচুরি ও সিঙ্গারা উল্লেখযোগ্য।
সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে পূজা হয়। তাই পশুবলি হয় না। সপ্তমীতে ১টি, অষ্টমীতে ১টি ও নবমীতে ৭টি চালকুমড়া বলি দেওয়া হয়। পারিবারিক প্রথানুযায়ী সপ্তমীতে ২৩টি, অষ্টমীতে ২৪টি এবং নবমীতে ২৫টি চালের নৈবেদ্য মাকে নিবেদন করা হয়। সন্ধিপূজায় সময় ১২ কেজি চালের নৈবেদ্য মাকে দেওয়া হয় এবং প্রতি বছর এক মুঠো করে চাল বাড়ানো হয়ে থাকে।
সপ্তমী তিথিতে নবপত্রিকাকে গঙ্গা-স্নানে না নিয়ে গিয়ে প্রতিমার সামনে পিতলের একটি গামলায় স্নান করানো হয়। সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী তিনদিনই হোম হয়। নবমীর হোমের পরে আমিষ খাওয়ার রীতি আছে। সব কাজে অপরাজেয় হতে দশমীর দিন সকালে অপরাজিতা পূজা করা হয়। এ দিন পানের ঝাড়-খিলি মায়ের হাতে দিয়ে দেবী প্রতিমা বরণ করা হয়। তারপর সিঁদুর খেলার পর দেবীকে বিদায় জানানো হয়। দুপুর ১ টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে দেওয়া এই বাড়ির রীতি।
সঙ্গের ছবিগুলি শ্রী সৌজিত বাগের নিকট হতে প্রাপ্ত।
শিবপুরের বাগ বাড়িতে যেতে হলে হাওড়া স্টেশন থেকে বি. গার্ডেন বা আন্দুল গামী বাসে উঠে ব্যাতাইতলায় নামুন। সেখান থেকে হেঁটে বাগ বাড়ি।
এই প্রতিবেদনটি লিখতে শ্রী সৌজিত বাগ আমাকে সাহায্য করেছেন। তাঁকে ধন্যবাদ।
*******
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন