শ্যামল কুমার ঘোষ
প্রতি বছর ক্লাবগুলোর নতুন নতুন থিম দেখতে রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। এখন তো মহালয়া থেকেই শুরু হয় ঠাকুর দেখা। এই সব পুজোতে পুজোটা হয় গৌণ। কিন্তু এই বারোয়ারি পুজোর বাইরে আর এক রকম পুজো হয় কলকাতার বনেদি বাড়িগুলোর থামওয়ালা ঠাকুরদালানে। এই সব বাড়ির পুজো কোনটা একশ বছরের পুরানো। কোনটা আবার দু-তিনশ, এমন কি চারশ বছরেরও বেশি পুরানো। এই সব বাড়ির পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কিংবদন্তি, ইতিহাস আর পরম্পরা। এখন হয়তো আগের মত সেই চোখ-ধাঁধানো জৌলুস নেই, ঠিকই। কিন্তু এই সব বাড়িতে পুজো হয় অতীতের পরম্পরা মেনে, নিষ্ঠা সহকারে। বাড়ির বেশির ভাগ সভ্য-সভ্যারা কলকাতার অন্যত্র, বাংলার বাইরে এমন কি বিদেশেও থাকেন। তাঁরা পুজো উপলক্ষ্যে এক সঙ্গে মিলিত হন। এই সব বাড়ির সাবেকি পুজোতে উপস্থিত হলে আপনি হয়তো পৌঁছে যাবেন সুদূর অতীতে। আজ চোরবাগান মিত্র বাড়ি।
চোরবাগান মিত্র বাড়ি :
৮৪, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট।
( রামমন্দির থেকে এসপ্লানেডের দিকে সামান্য এগুলে মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট পড়বে। বাঁ দিকের রাস্তা ধরে সামান্য এগুলে রাস্তার ডান দিকে মিত্র বাড়ি পাওয়া যাবে। )
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : এই পরিবারের আদি বাড়ি ছিল হুগলির কোন্নগরে। রামনাম মিত্র ছিলেন মুর্শিদাবাদের নবাবের দেওয়ান। দেওয়ানি থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জনের পর তিনি গোবিন্দপুরে এসে বসবাস ও ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর পুত্র অযোধ্যারাম। ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি গোবিন্দপুরে কেল্লার জন্য জমি নিলে অযোধ্যারাম চলে আসেন মেছুয়াবাজারে। তাঁর দুই ছেলে কৃপারাম ও জগন্নাথ। বিষয়সম্পত্তি ভাগ-বাঁটোয়ারার পর কৃপারাম চলে যান শুঁড়া গ্রামে ( এখনকার বেলেঘাটা অঞ্চল )। জগন্নাথ পৈতৃক বাড়িতেই থেকে যান।
৩৫০ বছরের বেশি পুরানো এই পরিবারের চোরবাগানের বাড়িটি তৈরি করেছিলেন জগন্নাথের পুত্র রামসুন্দর মিত্র, লোকমুখে যিনি খ্যাঁদারাম মিত্র নামে পরিচিত ছিলেন। ভূমিকম্পে এ বাড়ির বাইরের অংশ ভেঙে যাওয়ায় ম্যাকিনটশ বার্নকে দিয়ে বাড়িটির ভোল পাল্টে ফেলা হয়।
রামসুন্দরের ছিল মহাজনী কারবার। লর্ড ক্লাইভকে তিনি সুদে টাকা ধার দিতেন। রামসুন্দরের পরেও এ বাড়ির অনেকেই মহাজনী কারবার করেছেন। সাহেবরাই শুধু নন, কলকাতার বিখ্যাত পরিবার গুলির অনেকেই তাঁদের কাছ থেকে টাকা ধার করতেন।
ঠাকুর দালান ও প্রতিমার ছবি ( ২০১৭ সালে তোলা ) :
বাড়ির ঠাকুরদালান |
প্রতিমা - ১ |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন