সাবর্ণ রায় চৌধুরী বাড়ির ইতিহাস ও দুর্গা পূজা, কলকাতা
শ্যামল কুমার ঘোষ
কলকাতার বারোয়ারি পুজোতে 'কর্পোরেট' হস্তক্ষেপের পর দুর্গাপুজোতে এল এক আমূল পরিবর্তন। ক্লাবগুলোর মধ্যে শুরু হল সুস্থ প্রতিযোগিতা। শুরু হল থিমের পুজো।
প্রতি বছর ক্লাবগুলোর নতুন নতুন থিম দেখতে রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। এখন তো মহালয়া থেকেই শুরু হয় ঠাকুর দেখা। এই সব পুজোতে পুজোটা হয় গৌণ। কিন্তু এই বারোয়ারি পুজোর বাইরে আর এক রকম পুজো হয় কলকাতার বনেদি বাড়িগুলোর থামওয়ালা ঠাকুরদালানে। এই সব বাড়ির পুজো কোনটা একশ বছরের পুরানো। কোনটা আবার দু-তিনশ, এমন কি চারশ বছরেরও বেশি পুরানো। এই সব বাড়ির পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কিংবদন্তি, ইতিহাস আর পরম্পরা। এখন হয়তো আগের মত সেই চোখ-ধাঁধানো জৌলুস নেই, ঠিকই। কিন্তু এই সব বাড়িতে পুজো হয় অতীতের পরম্পরা মেনে, নিষ্ঠা সহকারে। বাড়ির বেশির ভাগ সভ্য-সভ্যারা কলকাতার অন্যত্র, বাংলার বাইরে এমন কি বিদেশেও থাকেন। তাঁরা পুজো উপলক্ষ্যে এক সঙ্গে মিলিত হন। এই সব বাড়ির সাবেকি পুজোতে উপস্থিত হলে আপনি হয়তো পৌঁছে যাবেন সুদূর অতীতে। আজ সাবর্ণ রায় চৌধুরী বাড়ি।
প্রতি বছর ক্লাবগুলোর নতুন নতুন থিম দেখতে রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। এখন তো মহালয়া থেকেই শুরু হয় ঠাকুর দেখা। এই সব পুজোতে পুজোটা হয় গৌণ। কিন্তু এই বারোয়ারি পুজোর বাইরে আর এক রকম পুজো হয় কলকাতার বনেদি বাড়িগুলোর থামওয়ালা ঠাকুরদালানে। এই সব বাড়ির পুজো কোনটা একশ বছরের পুরানো। কোনটা আবার দু-তিনশ, এমন কি চারশ বছরেরও বেশি পুরানো। এই সব বাড়ির পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কিংবদন্তি, ইতিহাস আর পরম্পরা। এখন হয়তো আগের মত সেই চোখ-ধাঁধানো জৌলুস নেই, ঠিকই। কিন্তু এই সব বাড়িতে পুজো হয় অতীতের পরম্পরা মেনে, নিষ্ঠা সহকারে। বাড়ির বেশির ভাগ সভ্য-সভ্যারা কলকাতার অন্যত্র, বাংলার বাইরে এমন কি বিদেশেও থাকেন। তাঁরা পুজো উপলক্ষ্যে এক সঙ্গে মিলিত হন। এই সব বাড়ির সাবেকি পুজোতে উপস্থিত হলে আপনি হয়তো পৌঁছে যাবেন সুদূর অতীতে। আজ সাবর্ণ রায় চৌধুরী বাড়ি।
সাবর্ণ রায় চৌধুরী বাড়ি :
( বড়িশা, সখেরবাজার। )
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের গোত্র 'সাবর্ণ'। এই বংশের লক্ষ্মীকান্ত মজুমদার কর্মজীবন শুরু করেন রাজা বসন্ত রায়ের তত্ত্বাবধানে। পরে রাজা প্রতাপাদিত্যের দেওয়ান হন। হুগলি জেলার গোঘাটা-গোপালপুরে লক্ষ্মীকান্তের পিতা কামদেব গঙ্গোপাধ্যায় ( ঘটকদের ভাষায় জীয়ো গাঙ্গুলী ) বাস করতেন। গার্হস্থ্য জীবনে থেকেও তিনি সন্ন্যাসীর মত অনাসক্ত ছিলেন এবং সর্বদা তীর্থ ভ্রমণ করতেন। কথিত আছে, তিনি স্ত্রী পদ্মাবতীকে সঙ্গে নিয়ে ব্রম্ভচারীর বেশে কালীঘাটের কাছে এক আশ্রম নির্মাণ করে নিজ ইষ্টদেবতার সাধনায় নিযুক্ত ছিলেন। এই সময় তাঁর স্ত্রী পদ্মাবতী এক পুত্র সন্তান প্রসব করে মারা যান। পত্নীর মৃত্যুর পর তিনি পুত্রকে প্রতিবেশীদের হাতে সমর্পন করে কাশীধামে গিয়ে দণ্ডি সন্ন্যাসী হন। মানসিংহ যখন সসৈন্যে বঙ্গে আসছিলেন তখন এই কামদেব ব্রহ্মচারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় এবং মানসিংহ তাঁহার নিকট শক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত হন। গুরুর অনুরোধে তাঁর পুত্রের সন্ধান করবার জন্য স্বীকৃত হন।
লক্ষীকান্ত প্রতিবেশীদের যত্নে প্রতিপালিত হয়ে বসন্ত রায়ের অনুগ্রহে প্রতাপাদিত্যের রাজ সরকারে প্রবেশ করেন এবং প্রতিভাবলে দেওয়ানের পদ লাভ করেন। পরে প্রতাপাদিত্যের পতনের পর মানসিংহের সুপারিশে জাহাঙ্গীর বাদশাহের নিকট থেকে কলকাতা সহ পাঁচ পরগণার সনদ পান। এই বংশের কেশবচন্দ্র ( কেশবরাম ) মজুমদার মুর্শিদকুলি খাঁর সময় রায়চৌধুরী উপাধি পান এবং তাঁর জমিদারির সুবিধার জন্য বড়িশায় এসে বাস করেন। তখন থেকে এই পরিবার বড়িশার সাবর্ণ রায় চৌধুরী নামে খ্যাত হয়। কেশবের পুত্র শিবদেব রায়ের কাছে কেউ কিছু চাইলে তিনি ফেরাতেন না, প্রত্যেকের সন্তোষ বিধান করতেন। তাই তিনি সকালের কাছে সন্তোষ রায় নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি কালীঘাটের ক্ষুদ্র মন্দির (যেটি বসন্ত রায় নির্মাণ করে ছিলেন ) ভেঙে বর্তমান মন্দির নির্মাণ করে দেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আওরঙ্গজেবের পৌত্র বঙ্গাধিপ আজিম উশ্বানকে ১৬০০০ টাকা নজরানা দিয়ে যে আদেশ পান সেই অনুসারে এই বংশীয় রামচাঁদ, মনোহর ও রামভদ্র রায় চৌধুরীর কাছ থেকে ১৩০০ টাকায় কলকাতা কিনে নেয়।
এই পরিবারে বর্তমানে মোট আটটি পূজা হয়। বড়িশাতে হয় ছয়টি। আটচালার পুজোটি প্রাচীনতম। আটটি পরিবারেই প্রতিমাই 'মঠচৌড়ি' বা তিন চালির।
বড় বাড়ির ( বড়িশা, সখেরবাজার ) দুর্গা প্রতিমার ছবি ( ২০১৫ সালে তোলা ) :
প্রতিমা - ১ |
প্রতিমা - ২ |
মেজ বাড়ি ( সাবর্ণ পাড়া, কে. কে. রায় চৌধুরী রোড ,সখেরবাজার, বড়িশা ) দুর্গা প্রতিমার ছবি ( ২০১৫ সালে তোলা ) :
প্রতিমা - ১ |
প্রতিমা - ২ |
সাজের আটচালা বাড়ির ( সাবর্ণ পাড়া, কে. কে. রায় চৌধুরী রোড , সখেরবাজার, বড়িশা ) পূজা মণ্ডপ ও দুর্গা প্রতিমার ছবি ( ২০১৫ সালে তোলা ) :
পূজা মণ্ডপ |
প্রতিমা |
সহায়ক গ্রন্থ :
১) যশোহর খুলনার ইতিহাস : সতীশচন্দ্র মিত্র
------------------------------------
আমার ইমেল : shyamalfpb@gmail.com প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
পিতার পদবি যদি গাঙ্গুলী হয় তাহলে পুত্রের পদবি মজুমদার কী করে ?
উত্তরমুছুনমজুমদার উপাধি পাওয়া।
উত্তরমুছুন