বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭

Kinnaur, Himachal Pradesh, Tour ( Part - 1) in Bengali

                                             
কিন্নর,  হিমাচল  প্রদেশ,  ভ্রমণ  
( ১ ম  পর্ব )  

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 


            হিমাচল  প্রদেশের  কিন্নর  জেলার  প্রাকৃতিক  সৌন্দর্য  দেখে  অবশ্যই  মুগ্ধ  হতে  হয়।  আর এই  কিন্নর-সৌন্দর্যের  মুকুট  কিন্নর-কৈলাস  হিমশৃঙ্গ।  এখানকার  প্রাকৃতিক  সৌন্দর্যকে  ঠিক  ভাষায়  প্রকাশ  করা  যায়  না।  শুধু  দু' চোখ  ভরে  এই  সৌন্দর্য-সুধা  পান  করতে  হয়।  সৃষ্টি  কর্তা  প্রকৃতিকে  এখানে  অকৃপণ  হাতে  মনের  মতন করে  সাজিয়েছেন।  সেই  সৌন্দর্য়ের  স্বাদ  পুরোপুরি  নিতে  হলে  বর্ষার  পর  সেপ্টেম্বরের  শেষে  অথবা  অক্টোবরের  প্রথমে  এখানে  যাওয়াই  ভাল।  কারণ  এই  সময়ে  প্রকৃতি  রঙে-রূপে  আরও  মনোহর  হয়ে  ওঠে।  আর  উপরি  পাওনা  হিসাবে  গাছে-গাছে  আপেল  ঝুলতে  দেখা  যায়।  গাছের  ডালে  সেই  ঝুলন্ত  আপেলের  গায়ে  হাত  ছোঁয়ানোর  আনন্দই  আলাদা।  প্রকৃতির এই  মনমোহিনী  রূপ  দেখতে  চলুন  আমরা  সিমলা  হয়ে  সারাহান  থেকে  বেড়ানো  শুরু  করি।  সিমলা  থেকে  সারাহানে  যেতে হলে  ২২  নং  জাতীয়  সড়ক  ( Hindusthan  Tibet  Road )  ধরে  এগিয়ে  যেতে  হবে।  পথে  পড়বে কুফরি, ফাগু, নারকান্দা  ও  রামপুর।


সিমলা থেকে কিন্নর যাওয়ার পথের নকশা


            সিমলা  থেকে সারাহানের  দূরত্ব  ১৭০ কিমি।  তাই  মাঝে-মাঝে  আমাদের একটু  বিশ্রাম  নিতে  হবে।  প্রথমে  দেখে  নিন  সবুজ  উপত্যকা  (Green Valley)।  এর  সবুজ  প্রকৃতি  আপনাকে  অবশ্যই  মুগ্ধ  করবে।  তারপর  চলুন  সুন্দর  শৈলশহর  নারকান্দায়।  এখানে  একটু  বিশ্রাম  করে  দেখে  নিন  নারকান্দার  প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।



সবুজ উপত্যকায় কুয়াশা

নারকান্দার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

সবুজের  মাঝে  ছবির  মত  সুন্দর  বাড়ি-ঘর

পাহাড়ি ফুল

হিমাচলের প্রজাপতি

 রামপুর ( Rampur )


            নারকান্দা  থেকে  আর  একটু  এগোলে  পড়বে  শতদ্রু  নদীর  ধারে  রামপুর  শহর।  রামপুরে  দেখার মতো  আছে  পদম  প্যালেস ।  রামপুর  একদা  বুশাহার  রাজ্যের  রাজধানী  ছিল।  হিমাচল  প্রদেশের  মুখ্যমন্ত্রী  বীরভদ্র  সিংহের  পূর্বপুরুষ  রাজা  রাম সিং  এখানে  রাজধানী  প্রতিষ্ঠা  করেন।  পরে  মহারাজা  পদম  সিং  ১৯১৯ সালে  এই  রাজপ্রাসাদ  তৈরি  শুরু  করেন  যা  শেষ  হয়  ১৯২৫ সালে।  এটি  স্থাপত্য  ও  শিল্পনৈপুণ্যের  এক  অপূর্ব  নিদর্শন ।  দোতলা  বাড়িটির  একতলা  পাথর  দিয়ে  এবং  দোতলা  কাঠ  দিয়ে তৈরি।  পাথর  ও  কাঠের  কাজ  খুব  সুন্দর।  শঙ্কু  আকৃতির  টিনের  ছাদও  দৃষ্টিনন্দন।  এটি  এখন  মুখ্যমন্ত্রী-পরিবারের   ব্যক্তিগত  বাসগৃহ ।  তাই  বাইরে  থেকে  দেখে  নিন।  
         


পদম প্যালেস - ১ 

পদম প্যালেস - ২

পদম প্যালেস - ৩

পদম প্যালেস - ৪


            আমাদের  এই  যাত্রাপথে  প্রাণচঞ্চলা  শতদ্রু  নদীকে  অনেকটা  পথ  আমরা  সঙ্গী  হিসাবে পাব।  তাই  শতদ্রু  নদীর  ধারে  আমরা  একটু  বিশ্রাম  নিতেই  পারি। 



শতদ্রু  উপত্যকায়  আঁকা-বাঁকা  পাহাড়ি পথ

শতদ্রু  নদী - ১

শতদ্রু  নদী - ২


 সারাহান ( Sarahan )

            রামপুর  থেকে  আরও  এগিয়ে  জেওরির  কাছে  ২২ নং  জাতীয়  সড়ক  ছেড়ে  ডান  দিকে  লিঙ্ক  রোডে  ১৭  কিমি  গেলে  আমরা  পৌঁছে  যাব  সারাহান।  হিমাচল  প্রদেশের  শতদ্রু উপত্যকায়  অবস্থিত  সবুজে  ঘেরা  এক  উন্নত  গ্রাম  সারাহান।এখান  থেকে  শতদ্রু  নদী  মাত্র  ৭ কিমি।  সারাহান  একদিকে  যেমন  শৈল  শহর  তেমনই  অপরদিকে  তীর্থ  ভূমি।  উচ্চতা  ২১৬৫ মিটার  (৭১০৩ ফুট )।  সিমলা  থেকে  এর  দূরত্ব  ১৭০ কিমি।  সারাহান  কে  কিন্নরের  প্রবেশ-দ্বার  বলা  হয়।  এর  সমস্ত  অঞ্চল  জুড়ে  আছে  পাইন  আর  আপেল  গাছ।  এখান থেকে  শ্রীখন্ড  মহাদেব  পর্বত  দেখা যায়।  সারাহানে  প্রধান  দ্রষ্টব্য  ভীমাকালী  দেবীর  মন্দির।  মন্দিরের  প্রধানা  দেবী  ভীমাকালী।  তিনি  বুশাহার  রাজ্যের  কুলদেবী।  প্যাগোডা  ধর্মী  এই  মন্দিরটি  হিন্দু  ও  বৌদ্ধ  স্থাপত্যের  এক অপূর্ব  নিদর্শন।  দ্বিতীয়  তলায়  আছে  দেবী  ভগবতীর  মূর্তি।  তৃতীয়  তলায়  দেবী  ভীমাকালী।  মন্দিরের  কাঠের  কাজ  অপূর্ব।  দরজার  রূপোর  কাজও  অনবদ্য।  মন্দির  প্রাঙ্গনে  দেবী  ভীমাকালী  ছাড়াও আছে  রঘুনাথ  ও  নৃসিংহনাথের  মন্দির।  মাথায়  টুপি  পরে  মন্দিরে  প্রবেশ  করার  নিয়ম।  মন্দিরে  থাকার  জন্য  অতিথি  নিবাস  আছে।  মন্দিরের  কাছেই  আছে  বুশাহার-রাজপ্রাসাদ  'শান্তিকুঞ্জ'।  সারাহানে  একটি  পক্ষী  নিবাসও  আছে। এখানে  হিমালয়ের  পাখি  মোনাল  ও  অন্যান্য  পাখির  প্রজনন  ও  সংরক্ষণ  করা  হয়। 



কুয়াশার মাঝে ভীমাকালী দেবীর মন্দির

ভীমাকালী দেবীর মন্দির - ১

ভীমাকালী দেবীর মন্দির - ২

ভীমাকালী দেবীর মন্দির - ৩

ভীমাকালী মন্দিরে কাঠের কাজ

ভীমাকালী মন্দিরের দরজায় কাঠের উপর  রুপোর পাতের কাজ 

মন্দিরের দরজার রুপোর কাজ - ১

মন্দিরের দরজার রুপোর কাজ - ২

পাহাড়ি বুনো ফুল

হিমালয়ের পাখি মোনাল

বুশাহার-রাজপ্রাসাদ  'শান্তিকুঞ্জ' - ১

বুশাহার-রাজপ্রাসাদ  'শান্তিকুঞ্জ' - ২

বুশাহার-রাজপ্রাসাদ  'শান্তিকুঞ্জ' - ৩
                                                                                                           ক্রমশ: 


পরের  অংশের  জন্য  নিচের  লিঙ্কে  ক্লিক  করুন :




২টি মন্তব্য: