সোমবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

Bonedi Bari Durga Puja, Howrah


বনেদি  বাড়ির  দুর্গাপূজা,  হাওড়া  

শ্যামল  কুমার  ঘোষ 


          
আন্দুল  রাজ  বাড়ির  দুর্গা  পূজা,  আন্দুল,  হাওড়া
                                   
            সংক্ষিপ্ত  ইতিহাস : আঠারো  শতকের  মধ্যভাগে  হুগলি  জেলার  আন্দুল  ছিল  একটি  বর্ধিষ্ণু  গ্রাম।  কর  পদবীর  কায়স্থ  পরিবারের  রামচরণ  বা  রামচাঁদ  করের ( রায় )  ফার্সি  ও  আরবি  ভাষায়  খুবই  দখল  ছিল।  আনুমানিক  ১৭৫০  খ্রীঃ  মাসিক  মাত্র  ২০  টাকায়  তিনি  ইস্ট  ইন্ডিয়া  কোম্পানির  হুগলির  দপ্তরে  উকিল  পদে  যোগ  দেন।  তীক্ষ্নবুদ্ধিসম্পন্ন  ও  পরিশ্রমী  রামচরণ  নিজের  কর্মদক্ষতায়  রাজধানী  মুর্শিদাবাদে  কোম্পানির  দেওয়ানের  সহকারী  হিসাবে  মাসিক  ৬০  টাকা  বেতনে  যোগ  দেন।  মুন্সী  নবকৃষ্ণের  ( শোভাবাজারের  মহারাজা  নবকৃষ্ণ  দেব )  মত  তিনিও  রবার্ট  ক্লাইভ  ও  ওয়ারেন  হেস্টিংসের  বিশ্বাসভাজন  ছিলেন।  তিনি  আন্দুল  অঞ্চলের  জোড়হাট  গ্রামটি  পেয়ে  জমিদারি  শুরু  করেন।  ১৭৫৭ খ্রীঃ  পলাশীর  যুদ্ধের  পর  পরাজিত  ও  পলাতক  সিরাজ-উদ্-দৌলার  প্রাসাদে  রক্ষিত  প্রায়  আট  কোটি  টাকার  মুদ্রা-হীরা-জহরত  লুট  করার  সময়  তিনি,  নবকৃষ্ণ  ও  আরও  অনেকে  উপস্থিত  ছিলেন। ( অনেকে  মনে  করেন  যে  রামচরণ  সিরাজের  প্রাসাদ  থেকে  লুন্ঠিত  টাকা  ও  জহরত  নদী  পথে  আন্দুলে  নিয়ে  এসেছিলেন,  কেননা  তিনি  যখন  মারা  যান  তখন  তাঁর  কাছে  ১৬  লক্ষ  টাকা  আয়ের  জমিদারি  ও  ২০  লক্ষ  টাকার  জহরত  বর্তমান  ছিল। )  ১৭৬৫  খ্রীঃ  ইংরেজ  বণিকদের  বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার  দেওয়ানি  লাভের  পর  তিনি  ক্লাইভের  দেওয়ান  পদে  নিযুক্ত  হন।  ফলে  তাঁর  প্রভাব,  প্রতিপত্তি  ও  ধন-সম্পত্তি  যথেষ্ট  বৃদ্ধি  পায়।  লর্ড  ক্লাইভের  ইচ্ছায়  তিনি  'রাজা'  উপাধি  পান।  মোগল  সম্রাট  দ্বিতীয়  শাহআলমের ( ১৭৫৯-১৮০৬ )  কাছে  আর্জি  দিয়ে  রামচরণ  তাঁর  প্রাপ্য  'রাজা'  উপাধি  নিজ  পুত্র  রামলোচন  রায়কে  পাইয়ে  দেন  ২ জানুয়ারি,  ১৭৬৬  খ্রীঃ। 

রাজা  রামলোচন  রায় :  রাজা  রামলোচন  রায়  পিতার  জীবিত  অবস্থায়  জমিদারির  কার্যভার  গ্রহণ  করেন।  বিদ্যোৎসাহী  রাজা  রামলোচন  আন্দুল  ও  পার্শ্ববর্তী  এলাকায়  টোল,  চতুস্পাঠী  ও  আয়ুর্বেদীয়  চিকিৎসালয়  স্থাপন  করেন।  কোম্পানির  গভর্নর  ভান্সিটার্ট  তাঁকে  তাঁর  দেওয়ান  হিসাবে  নিযুক্ত  করেন।  শেষ  জীবনে  তিনি  কলকাতার  পাথরিয়াঘাটার  বাসভবনে  থাকতেন।  মহারাজ  নন্দকুমারের  জালিয়াতির  বিচারের  সময়  তিনি  ছিলেন  সরকার  পক্ষের  প্রধান  সাক্ষীদের  অন্যতম  এবং  এই  মামলায়  তিনি  হেস্টিংসকে  যথেষ্ট  সাহায্য  করেছিলেন।  কালীঘাটের  মন্দিরের  সামনে  নাটমন্দির  তিনি  তৈরি  করেছেলেন।  আন্দুলের   প্রথম  রাজবাড়ি  তাঁর  তৈরি।  তাঁর  তৈরি  দুর্গাদালানে  প্রথম  দুর্গাপূজা  শুরু  হয়  ১৭৭০  খ্রীঃ।  ১৭৭৭  খ্রীঃ  তাঁর  মৃত্যু  হয়। 

রাজা  কাশীনাথ  রায় :  রামলোচনের  জ্যেষ্ঠ্য  পুত্র  কাশীনাথ  রায়
( ১৭৬৭- ১৮০৭ খ্রীঃ )  মাত্র  দশ  বছর  বয়সে  আন্দুল  জমিদারির  উত্তরাধিকারী  হন।  আন্দুলের  অন্নপূর্ণার  মন্দির  ও  সংলগ্ন  চোদ্দটি  শিব  মন্দির  তিনিই  নির্মাণ  করেছিলেন।   
               
রাজা  রাজনারায়ণ রায় : রাজা  কাশীনাথ  রায়  যখন  মারা  যান  তখন  তাঁর  একমাত্র  পুত্র  রাজনারায়ণের  বয়স  মাত্র  চার  বছর।  স্বভাবতই  'কোর্ট  অফ্  ওয়ার্ডস'  জমিদারি  পরিচালনার  ভার  নেন।  তিনি  হিন্দু  কলেজের  ছাত্র  ছিলেন।  ডিরোজিওর  'ইয়ং-বেঙ্গল'  আন্দোলনের  তিনি  অন্যতম  সদস্য  ছিলেন।  সংস্কৃত  ভাষায়  তাঁর  ব্যুৎপত্তি  ছিল।  তাঁর  আমলে  আন্দুল  সংস্কৃত  সাহিত্য-চর্চার  এক  বিশেষ  কেন্দ্র  হয়ে  উঠেছিল।  ভারতের  বড়লাট  লর্ড  অকল্যান্ড  ১৮৩৬  খ্রীঃ  তাঁকে  'রাজা  বাহাদুর'  উপাধি  দেন  এবং  একটি  রত্নখচিত  তরবারি  উপহার  দেন।  আন্দুলের  বিরাট  রাজপ্রাসাদটি  তাঁর  আমলে  তৈরি।  যদিও  তাঁর  পুত্র  বিজয়কেশব  রাজপ্রাসাদের  বাকি  কিছু  অংশ  নির্মাণ  করেন।  প্রায়  ষাট  ফুটের  বেশি  উঁচু  তিনতলা  বিশিষ্ট  বিরাট  রাজপ্রাসাদটির  সামনের  দিকের  মাঝখানে  রয়েছে  দশটি  ডোরিক্  স্থাপত্যের  অনুকরণে  তৈরি  প্রায়  পঞ্চাশ  ফুট  উঁচু  স্তম্ভ  যা  সারা  বাংলার  একমাত্র  এই  প্রাসাদটিতেই  দেখা  যায়। 

রাজা  বিজয়কেশব রায় : ১৮৫৯  খ্রীঃ  রাজা রাজনারায়ণের  মৃত্যুর  সময়ে  পুত্র  বিজয়কেশবের  বয়স  মাত্র  ১৩  বছর।  বিজয়কেশবের  দুই  পত্নী।  কিন্তু  তাঁদের  কোন  পুত্র  সন্তান  ছিল  না।  তিনি  তন্ত্র  সাধনায়  শেষ  জীবন  অতিবাহিত  করেন।  মারা  যান  ১৮৭৯  খ্রীঃ।  তাঁর  দুই  বিধবা  রানি  দুর্গাসুন্দরী  ও  নবদুর্গা  দুটি  দত্তক  নেন।  কিন্তু  আদালতের  রায়ে  দত্তক  গ্রহণ  অবৈধ  সাব্যস্ত  হয়।  রাজা  কাশীনাথের  কন্যা  ত্রিপুরাসুন্দরীর  বিবাহ  হয়  কৃষ্ণনগর  নিবাসী  কালিপদ  মিত্রের  সঙ্গে।  আদালতের  আর  একটি  আদেশে  ত্রিপুরাসুন্দরীর  পুত্র  ক্ষেত্রকৃষ্ণ  মিত্র  আন্দুল  জমিদারির  মালিকানা  পান।  এইভাবে  আন্দুলে  'রায়'  রাজপরিবারের  অবসান  হয়  ও  'মিত্র'  রাজপরিবারের সূচনা  হয়।

            ক্ষেত্রকৃষ্ণ  মিত্র  আন্দুল  ও  অন্যান্য  স্থানের  বেশ  কয়েকটি  দেবালয়,  রাস্তা-ঘাট,  সেতু,  স্কুল,  হাসপাতাল  প্রভৃতি  জনহিতকর  কাজে  সাধ্যমত  দান  করেছিলেন।  ছোট  লাট  এ.  ম্যাকেঞ্জি  তাঁকে  'সার্টিফিকেট  অফ  অনার'  প্রদান  করেন। স্থানীয়  লোকেরা  তাঁকে  'রাজা'  উপাধি  দিয়েছিলেন।  ১৯০৭ খ্রীঃ  ৮৫  বছর  বয়সে  তিনি  মারা  যান। 

            এখন  আন্দুল  রাজবাড়িতে  নতুন  তৈরি  দুর্গাদালানে  প্রতি  বছর  দুর্গাপূজা  অনুষ্ঠিত  হয়।

            আন্দুল  রাজবাড়ি  যেতে  হলে  হাওড়া  স্টেশন  থেকে  আন্দুলের  বাসে  উঠে  আন্দুল  বাজারে  নামুন।  সেখান  থেকে   টোটোতে  বা  হেঁটে  আন্দুল  রাজবাড়ি। 

সঙ্গের  ছবিগুলো  ২০১৮  সালের  ষষ্ঠীর  দিন  তোলা।   


আন্দুল  রাজবাড়ি - ১

আন্দুল  রাজবাড়ি - ২

খিলানের  উপরের  কাজ

নতুন  ঠাকুরদালান 

প্রতিমা - ১

প্রতিমা - ২

প্রতিমা - ৩

আন্দুল  দত্ত  চৌধুরী  বাড়ির  দুর্গা  পূজা,  আন্দুল,  হাওড়া
                                    
ঠিকানা : চৌধুরী  পাড়া  লেন।  ( আন্দুল  ব্যায়াম  সমিতির  কাছে  )

            সংক্ষিপ্ত  ইতিহাস :  আদিশূরের  সময়ে  পুরুষোত্তম  দত্ত  পাঁচ  ব্রাহ্মণের  সঙ্গে  এদেশে  এসেছিলেন।  পুরুষোত্তম  দত্ত  বাংলার  বালি  গ্রামে  বসতি  স্থাপন  করেন।  তাঁর  উত্তর  পুরুষ  তেকড়ি  দত্ত  পিতার  ধন-সম্পদসহ  বালি  থেকে  বাস  উঠিয়ে  আন্দুলে  এসে  বসবাস  শুরু  করেন।  তিনি  ২৫২  বিঘা  জমির  উপর  প্রাসাদ,  দেবালয়  ইত্যাদি  নির্মাণ  করেন।  পরে  বাংলার  নবাব  কর্তৃক  'চৌধুরী'  উপাধি  লাভ  করেন।  তখন  থেকে  এই  বংশ  আন্দুলের  ''দত্ত  চৌধুরী''  বংশ  বলে  পরিচিতি  লাভ  করে। 

            এই  পরিবারের  রামশরণ  দত্তচৌধুরী ( ১৫৪৮ - ১৬০৬ খ্রী )  প্রথম  এই  বাড়িতে  দুর্গা  পূজা  শুরু  করেন। 

           আন্দুল  দত্ত  চৌধুরী  বাড়ি  যেতে  হলে  হাওড়া  স্টেশন  থেকে  আন্দুলের  বাসে  উঠে  আন্দুল  বাজারে  নামুন।  সেখান  থেকে   টোটোতে  বা  হেঁটে  আন্দুল  দত্ত  চৌধুরী  বাড়ি।

সঙ্গের  ছবিগুলো  ২০১৮  সালের  ষষ্ঠীর  দিন  তোলা।


বাড়ির ঠাকুরদালান

প্রতিমা - ১

প্রতিমা - ২

প্রতিমা - ৩


ভট্টাচার্য   বাড়ির  দুর্গা  পূজা,  আন্দুল,  হাওড়া                                        
ঠিকানা : প্রেমিক  ভবন  ( মাঝের  বাড়ি ),  প্রেমিক  সরণি,  দক্ষিণ  পাড়া,  আন্দুল 

            আন্দুলের  ভট্টাচার্য  বাড়ি  যেতে  হলে  হাওড়া  স্টেশন  থেকে  আন্দুলের  বাসে  উঠে  আন্দুল  বাজারে  নামুন।  সেখান  থেকে   টোটোতে  বা  হেঁটে  আন্দুল  ভট্টাচার্য  বাড়ি

সঙ্গের  প্রতিমার  ছবি  ২০১৮  সালের  ষষ্ঠীর  দিন  তোলা।


প্রতিমা - ১ 

প্রতিমা - ২

প্রতিমা - ৩


নফর  চন্দ্র  পাল  বাড়ির  দুর্গা  পূজা,  রাজগঞ্জ,  সাঁকরাইল,  হাওড়া
                                  
            সংক্ষিপ্ত  ইতিহাস : এন  সি  পাল  ( নফর  চন্দ্র  পাল )  প্রধানত  ইঁটখোলার  ব্যবসা  করতেন।  এই  ব্যবসা  করে  তিনি  প্রচুর  সম্পত্তি  করেন।  আন্দুল  বাজারে  এঁদের  অনেক  দোকান  আছে।  বর্তমানে  এই  বাড়ির  ঠাকুরদালানে  অনেক  বাংলা  গানের  চলচ্চিত্রায়ণ  করা  হয়।  পাঁচ  পুরুষ  ধরে  এই  বাড়িতে  দুর্গা  পূজা  হয়ে  আসছে। 

        এই  বাড়িতে  যেতে  হলে  হাওড়া  স্টেশন  থেকে  সাঁকরাইলের  বাসে  উঠে  রাজগঞ্জ  শীতলা  তলায়   নামুন।  সেখান  থেকে   হেঁটে  গঙ্গার  ধারে  পাল  বাড়ি।  আন্দুল  বাজার  থেকে  অটোতে  প্রথমে  বানিপুর  এবং  পরে  আর  একটি  অটোতে  উঠে  রাজগঞ্জ  শীতলা  তলায়   নেমেও  এই  বাড়িতে  যেতে  পারেন।     


সঙ্গের  ছবিগুলো  ২০১৮  সালের  ষষ্ঠীর  দিন  তোলা। 

ঠাকুর  দালান  সহ  এন  সি  পালের  বাড়ি

বাড়ির  একাংশ

প্রতিমা - ১

প্রতিমা - ২

প্রতিমা - ৩

প্রতিমা - ৪

রায়  চৌধুরী   বাড়ির  দুর্গা  পূজা,  শিবপুর,  হাওড়া

ঠিকানা :
৪৬ এ / ১১  শিবপুর  রোড,  শিবপুর,  হাওড়া 

সংক্ষিপ্ত  ইতিহাস : হাওড়া  জেলার  শিবপুরের  রায়চৌধুরী  বংশের  প্রতিষ্ঠাতা  রাজা  রামব্রহ্ম  ( মুখোপাধ্যায় ) -এর  আদি  বাসভূমি  ছিল  উত্তর  ২৪  পরগণা  জেলার  ব্যারাকপুর  মহকুমার  চানক  মণিরামপুর।  এঁদের  সাবেকি  বাড়িটি  পলতার  জলাধার  তৈরির  সময়  অবলুপ্ত  হয়।  ভিন্নমতে,  এই  বংশের  একাংশ  গোবিন্দপুর  ( ফোর্ট  উইলিয়ামের  আদি  কেন্দ্রস্থল )  গ্রামে  বাস  করতেন।  আনুমানিক  ১৬৮৩  খ্রীঃ  ভরদ্বাজ  গোত্রীয়  ব্রাহ্মণ  জমিদার  রাজা  রামব্রহ্ম  রায়চৌধুরী  পৈতৃক  জমিদারির  তেরোটি  গ্রাম  ( শিবপুর,  রামকৃষ্ণপুর,  ব্যাতাইতলা,  ভাসি,  সলপ,  নিবড়া,  মাঝের  হাটি,  বাঁকড়া,  গোদা,  বেতড়,  চামরাইল,  নিতাঙ্কুর  ও  দেবীপাড়া  প্রভৃতি )  নিজের  ভাগে  পেয়ে  শিবপুরে  বসতি  শুরু  করেন।  'হাওড়া  জেলার  ইতিহাস'  লেখক  অচল  ভট্টার্চার্যের  মতে  মোগল  সম্রাট  ঔরঙ্গজেবের ( ১৬৫৮- ১৭০৭  খ্রীঃ )  ফরমানে  রায়চৌধুরীরা  এই  অঞ্চলের  জমিদারির  মালিক  হন  এবং  'রাজা'  উপাধি  পান।  শিবনারায়ণ  শাস্ত্রীর  মতে,  নবাব  আলীবর্দীর ( ১৭৪০-৫৬  খ্রীঃ )  আনুকুল্যে  হাওড়ার  এই  বিস্তীর্ণ  অঞ্চলের  স্বত্ব  পান  রামব্রহ্মের  পুত্র  সুকদেব।  সাত্ত্বিক  রাজা  রামব্রহ্ম  রায়চৌধুরী  গৃহী-সংসারী  হয়েও  ব্রহ্মচারীর  মত  জীবন  যাপন  করতেন।  তিনি  ১৭০৭  খ্রীঃ  মারা  যান।  অনেকে  মনে  করেন,  শিবপুরের  বেতাইচণ্ডী ( বেত্রচণ্ডিকা )  মন্দিরটি  রায়চৌধুরী  বংশের  পূর্বপুরুষদেরই  প্রতিষ্ঠিত।  তবে  এটি  সঠিক  না  হলেও মন্দিরটির  সংস্কার  ও  দেবীর  নিত্যপূজার  ব্যবস্থা  যে  রায়চৌধুরীরা  করেছিলেন  তা  অনস্বীকার্য।  

              রাজা  রামব্রহ্মের  পুত্র  সুকদেব  জমিদারির  মালিক  হন  আনুমানিক  ১৭০৭  খ্রীঃ।  মোগল  সম্রাট  ফারুকশিয়ার  ১৭১৭  খ্রীঃ  ইংরাজ  বণিকদের  বিনা  শুল্কে  বাংলায়  বাণিজ্য  করার  অনুমতি  দেন।  কিন্তু  বাংলার  স্বাধীনচেতা  সুবাদার  নবাব  মুর্শিদকুলি  খান  প্রথমে  এই  ফরমান  অগ্রাহ্য  করেন,  পরে  অবশ্য  মেনে  নেন।  ইংরাজ  কোম্পানি  ভাগীরথীর  উভয়  তীরের  প্রায়  আটত্রিশটি  গ্রামে  বাণিজ্য  করার  অনুমতি  পায়।  কিন্তু  পশ্চিম  তীরের  গ্রামগুলি ( সালিকা,  হাওড়া,  কাসুন্দিয়া,  বেতড়,  শিবপুর  প্রভৃতি )  বহুদিন  নবাবের  পরোক্ষ  সহায়তায়  রায়চৌধুরীদের  বিরোধিতার  জন্য  ইংরেজদের  নিয়ন্ত্রণে  আসেনি।  সঙ্গত  কারণে  ইংরাজ  কোম্পানি  সে  জন্য  রায়চৌধুরীদের  খুব  একটা  সুনজরে  দেখতেন  না। 

            রায়চৌধুরীদের  দুর্গাপূজা  প্রাচীনত্ব  ও  নিখুঁত  শাস্ত্রীয়  নিয়মানুবর্তিতার  জন্য  বিশেষ  উল্লেখের  দাবি  রাখে।  রাজা  রামব্রহ্ম  আনুমানিক  ১৬৮৬  খ্রীঃ  নহবৎখানা  সহ  এক  বিশাল  দুর্গাদালান  তৈরী  করেছিলেন।  শোনা  যায়,  ইংরেজ-বিদ্বেষী  অভিব্যক্তিতেই  এঁদের  পূজায়  নাকি  সাদা  চামড়ার  প্রতীক  একটি  সাদা  ছাগ  বলির  প্রবর্তন  করেন  রামহ্মের  পুত্র  সুকদেব।  এখানে  উল্লেখ্য,  দুর্গাদালানটি  প্রথমে  ছিল  বাঁশের  তৈরি   আটচালা।  এখনও  এই  দুর্গাদালানটি  'সাঁজের  আটচালা'  নামেই  পরিচিত।  দুর্গাদালানে  এখনও  প্রতি  বছর  প্রাচীন  রীতি  অনুযায়ী  দুর্গাপূজা  অনুষ্ঠিত  হয়। 

             শিবপুরের  রায়চৌধুরী  বাড়ি  যেতে  হলে  কলকাতার  রবীন্দ্রসদন  থেকে  চ্যাটার্জীহাট  গামী  বাসে  উঠুন।  চ্যাটার্জীহাট  থেকে  শিবপুর  রোড  ধরে  এগিয়ে  গেলে  পাবেন  রায়চৌধুরী  বাড়ি।  হাওড়া  স্টেশন  থেকে  বাসে  শিবপুর  ট্রাম  ডিপোতে  নেমেও  রায়চৌধুরী  বাড়ি যেতে  পারেন।
                      
সঙ্গের  প্রতিমার  ছবি  ২০১৮  সালের  ষষ্ঠীর  দিন  তোলা।


দুর্গাদালানে  প্রতিমা - ১

দুর্গাদালানে  প্রতিমা - ২

দুর্গাদালানে  প্রতিমা - ৩

দুর্গাদালানে  প্রতিমা - ৪

প্রতিমা

ভট্টাচার্য   বাড়ির  দুর্গা  পূজা,  শিবপুর,  হাওড়া
                                     
ঠিকানা :
১৭০/১  শিবপুর  রোড,  শিবপুর,  হাওড়া 

  সংক্ষিপ্ত  ইতিহাস হাওড়া  জেলার  শিবপুরের  প্রাচীন    জমিদার   রায়চৌধুরী  বংশের  প্রতিষ্ঠাতা  রাজা  রামব্রহ্ম  ( মুখোপাধ্যায় )।  তিনি  পৈতৃক  জমিদারির  তেরোটি  গ্রাম  ( শিবপুর,  রামকৃষ্ণপুর,  ব্যাতাইতলা,  ভাসি,  সলপ,  নিবড়া,  মাঝের  হাটি,  বাঁকড়া,  গোদা,  বেতড়,  চামরাইল,  নিতাঙ্কুর  ও  দেবীপাড়া  প্রভৃতি )  নিজের  ভাগে  পেয়ে  শিবপুরে  বসতি  শুরু  করেন।  রায়চৌধুরীদের  পুরোহিত  ছিলেন  এই  ভট্টাচার্য  পরিবার।  এঁরা  রায়চৌধুরীদের  সঙ্গে  একই  সময়ে  শিবপুরে  এসে  বসতি  স্থাপন  করেন।  বাড়ির  লাগোয়া  ঠাকুরঘরে  প্রতি  বছর  দুর্গাপূজা  অনুষ্ঠিত  হয়। 

             শিবপুরের  ভট্টাচার্য  বাড়ি  যেতে  হলে  কলকাতার  রবীন্দ্রসদন  থেকে  চ্যাটার্জীহাট  গামী  বাসে  উঠুন।  চ্যাটার্জীহাট  থেকে  শিবপুর  রোড  ধরে  এগিয়ে  গেলে  পাবেন  ভট্টাচার্য  বাড়ি।  হাওড়া  স্টেশন  থেকে  বাসে  উঠে  শিবপুর  ট্রাম  ডিপোতে  নেমেও  রায়চৌধুরী  বাড়ি যেতে  পারেন।
  
সঙ্গের  প্রতিমার  ছবি  ২০১৮  সালের  ষষ্ঠীর  দিন  তোলা।

প্রতিমা - ১

প্রতিমা - ২

প্রতিমা - ৩

বটকৃষ্ণ  পাল  বাড়ির  দুর্গা  পূজা,  শিবপুর,  হাওড়া
                               
ঠিকানা :
৩৮,  নব  গোপাল  মুখার্জী  লেন,  শিবপুর,  হাওড়া

            শিবপুরের  বটকৃষ্ণ  পালের  বাড়ি  যেতে  হলে  কলকাতার  রবীন্দ্রসদন  থেকে  চ্যাটার্জীহাট  গামী  বাসে  উঠুন।  চ্যাটার্জীহাট  থেকে  শিবপুর  রোড  ধরে  এগিয়ে  গেলে  নব  গোপাল  মুখার্জী  লেনে   পাবেন  বটকৃষ্ণ  পালের  বাড়ি।  হাওড়া  স্টেশন  থেকে  বাসে  উঠে  শিবপুর  ট্রাম  ডিপোতে  নেমেও  বটকৃষ্ণ  পালের  বাড়ি যেতে  পারেন।  এটিই  কাছে  হবে। 

সঙ্গের  প্রতিমার  ছবি  ২০১৮  সালের  ষষ্ঠীর  দিন  তোলা।
   

বটকৃষ্ণ  পাল  বাড়ির  প্রতিমা - ১

বটকৃষ্ণ  পাল  বাড়ির  প্রতিমা - ২

বটকৃষ্ণ  পাল  বাড়ির  প্রতিমা - ৩


বাগ  বাড়ির  দুর্গা  পূজা,  শিবপুর,  হাওড়া
                                 
বাড়ির  ঠিকানা :
১১/২৪  বলাই  মিস্ত্রি  লেন,  শিবপুর,  হাওড়া - ৩

সংক্ষিপ্ত  ইতিহাস :

            এই  বাড়ির  পূর্বপুরুষ  শ্রী  পরেশ  চন্দ্র  বাগ  ছিলেন  হাওড়া  জেলার  বলুহাটি  অঞ্চলের  বাগ  পরিবারের  সপ্তম  পুরুষ।  অল্প  বয়সে  তিনি  পিতৃহারা  হন।  ১৯২৩  খ্রীষ্টাব্দে  পারিবারিক  কারণে  তিনি  তাঁর  পৈত্রিক  বিষয়-সম্পত্তি  পরিত্যাগ  করে  হাওড়া  জেলার  পাতিহাল  অঞ্চলে  চলে  আসেন।  পরবর্তী  কালে,  কর্মজীবনে  তিনি  কলকাতা  হাইকোর্টের  উচ্চপদস্থ  অফিসার  হিসাবে  যথেষ্ট  সুনাম  অর্জন  করেন।  হাওড়ার  শিবপুরে  নতুন  বাড়ি  নির্মাণ  করেন।  এই  ভদ্রাসনে  তাঁদের  বলুহাটি  গৃহের  দুর্গা  পূজা  ছোট  আকারে  আলাদা  করে  শুরু  করেন।  পরে  অবস্থার  উন্নতির  সঙ্গে  সঙ্গে  পারিবারিক  পূজারও  শ্রীবৃদ্ধি  ঘটে।  বর্তমানে  তাঁর  অধস্তন  তৃতীয়  পুরুষ  শ্রী  সৌজিত  বাগ  এই  বাড়িতে  পূজা  পরিচালনায়  ব্রতী  আছেন। 
  
            এই  পরিবারে  দুর্গা  কন্যা  রূপে  পূজিতা  হন।  মাকে  বেনারসী  শাড়ি  ও  সোনার  গহনা  পরানো  হয়।  মাহিষ্য  পরিবার  বলে  অন্নভোগের  রীতি  নেই।  ভোগে  ৭ রকমের  মিষ্টি  ও  ৫ রকমের  নোনতা  খাবার  মাকে  নিবেদন  করা  হয়।  এর  মধ্যে  লুচি,  মিষ্টি,  মালপোয়া,  গজা,  বোঁদে,  নিমকি,  মিহিদানা,  কচুরি  ও  সিঙ্গারা  উল্লেখযোগ্য।  

            সম্পূর্ণ  বৈষ্ণব  মতে  পূজা  হয়।  তাই  পশুবলি  হয়  না।  সপ্তমীতে  ১টি,  অষ্টমীতে  ১টি  ও  নবমীতে  ৭টি  চালকুমড়া  বলি  দেওয়া  হয়।  পারিবারিক  প্রথানুযায়ী  সপ্তমীতে  ২৩টি,  অষ্টমীতে  ২৪টি  এবং  নবমীতে  ২৫টি  চালের  নৈবেদ্য  মাকে  নিবেদন  করা  হয়।  সন্ধিপূজায়  সময়  ১২  কেজি  চালের  নৈবেদ্য  মাকে  দেওয়া  হয়  এবং  প্রতি  বছর  এক  মুঠো  করে  চাল  বাড়ানো  হয়ে  থাকে। 

           সপ্তমী  তিথিতে  নবপত্রিকাকে  গঙ্গা-স্নানে  না  নিয়ে  গিয়ে  প্রতিমার  সামনে  পিতলের  একটি  গামলায়  স্নান  করানো  হয়।  সপ্তমী,  অষ্টমী  এবং  নবমী  তিনদিনই  হোম  হয়।  নবমীর  হোমের  পরে  আমিষ  খাওয়ার  রীতি  আছে।  সব  কাজে  অপরাজেয়  হতে  দশমীর  দিন  সকালে  অপরাজিতা  পূজা  করা  হয়।  এ  দিন  পানের  ঝাড়-খিলি  মায়ের  হাতে  দিয়ে  দেবী  প্রতিমা  বরণ  করা  হয়।  তারপর  সিঁদুর  খেলার  পর  দেবীকে  বিদায়  জানানো  হয়।  দুপুর  ১ টার  মধ্যে  প্রতিমা  বিসর্জন  দিয়ে  দেওয়া  এই  বাড়ির  রীতি।     
   
            সঙ্গের  ছবিগুলি  শ্রী  সৌজিত  বাগের  নিকট  হতে  প্রাপ্ত।

প্রতিমা - ১
প্রতিমা - ২

প্রতিমা - ৩

প্রতিমা - ৪

প্রতিমা - ৫

নৈবেদ্য - ১

নৈবেদ্য - ২
নৈবেদ্য - ৩
নৈবেদ্য - ৪
সন্ধি পূজার দীপ প্রজ্বলন

প্রজ্বলিত দীপ

            শিবপুরের  বাগ  বাড়িতে  যেতে  হলে  হাওড়া  স্টেশন  থেকে  বি. গার্ডেন  বা  আন্দুল  গামী  বাসে  উঠে  ব্যাতাইতলায়  নামুন।  সেখান  থেকে  হেঁটে  বাগ  বাড়ি।

            এই  প্রতিবেদনটি  লিখতে  শ্রী  সৌজিত  বাগ  আমাকে  সাহায্য  করেছেন।  তাঁকে  ধন্যবাদ।


বসু  বাড়ির  দুর্গা  পূজা,  রামকৃষ্ণপুর,  হাওড়া


            রামকৃষ্ণপুরের  বাসাবাড়িতে  যেতে  হলে  হাওড়া  স্টেশন  থেকে  বাসে  উঠে  রামকৃষ্ণপুর  নামুন।  সেখান  থেকে  অটো  বা  রিকশায়  বসু  বাড়ি। 

  সঙ্গের  প্রতিমার  ছবি  ২০১৮  সালের  ষষ্ঠীর  দিন  তোলা।  


বসু বাড়ির ঠাকুর দালান 
বসু বাড়ির প্রতিমা - ১
বসু বাড়ির প্রতিমা - ২
বসু বাড়ির প্রতিমা - ৩

সহায়ক  গ্রন্থ /  সূত্র :
              ১) বাংলার  খেতাবী  রাজ-রাজড়া :  বিমল  চন্দ্র  দত্ত   
  

******

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন